Sunday, July 8, 2018

জীবন ও বাস্তবতা



জীবনের বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর। এটাই জীবন। জীবনের বাস্তবতার বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যতই নিষ্ঠুর হউক বা যতই কষ্ট হউক তা সয়ে নিতে হয়, মেনে নিতে হয় জীবনের প্রয়োজনেই। জীবনে কষ্ট আসলে মানসিক ভাকে যতটুকু ভেঙ্গে পড়বে জীবন তার দ্বিগুন পিছিয়ে যাবে। জীবনের সকল দূঃখ কষ্ট ও বাস্তবতাকে জীবনের অংশ হিসাবে মেনে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করার নামই হচ্ছে সুখ। জীবনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে , সে কখনও এক পথে চলেনা। মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী চলেনা।জীবনের এই বৈশিষ্ট্যকে যারা মেনে নিতে পারেনা তারাই হতাশ জীবন যাপন করে। যারা মেনে নিতে পারে তারাই সুখী । কিন্তু সবাই কি পারে সব অবস্থা মেনে নিতে ? কিন্তু মেনে নিতে হয় জীবনের জন্য। জীবনেরবাস্তবতা যারা মেনে নেয় তারা জীবনের আনন্দগুলো উপভোগ করে, জীবনকেউপভোগ করে। কষ্ট ও দুঃখগুলো থেকে তারা শিক্ষা নেয়। গৃহীত শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে তারা জীবন সাজায়। ফলে তাদের জীবনের দুঃখ কষ্টগুলো বাহির থেকে দেখা যায়না বা তারা তা দেখাতে চায়না। দুঃখ কষ্ট তারা সামলে নিয়ে সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহন করে। তাদের সহনমাত্রা অনেক বেশী থাকায় একটা সময় এসে দুঃখ কষ্ট তাদেরকে ছুঁতে চায়না , ছুঁয় না। আমরা বলি চীরসূখী মানুষ । আসলে তা নয়। তারা দুঃখ কষ্টকে জীবনের অংশ হিসাবে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেয়। তারা অনেক কষ্ট সয়ে , মেনে নিয়ে কষ্টকে জয় করে নিয়েছে। জীবনেরবাস্তবতায় আসা কষ্টকে মেনে না নিয়ে হতাশ হলেই জীবন হতাশ হয়। কিছু কিছু কষ্ট জীবনে আসে যা ক্ষুদ্র জীবনের কাছে পাহাড় তুল্য। হতাশ নয়, ধৈর্য্য ও সময়ই অনেক সমস্যার সমাধান দেয়। কষ্ট কখনও কখনও এমন ভাবে আসে যখন চোখ বন্ধ হয়ে যায়। কান বধির হয়ে যায়।কন্ঠ বোবা হয়ে যায়। বুদ্ধি নির্বোধ হয়ে যায়। শরীর পঙ্গু হয়ে যায়। দিশেহারা জীবনে সব পরিকল্পনা ছাড়খার হয়ে যায়। তারপরও মানুষকে বেঁচে থাকতে হয় জীবনের অদৃশ্য প্রয়োজনে। আমি জানিনা কী সে প্রয়োজন। জীবনের কোথায় যেন কিসের একটা অদৃশ্য টান।আমার অনুপস্থিতিতে সব চলবে যথারীতি। তারপরও মনে হয় আমিই যেন সব সমস্যা সমাধানের একমাত্র ভরষা। মনে হয়, আমি ছাড়া সমস্যা সমাধানের আর কেউ নাই। আমাকে ছাড়া ? অসম্ভব। এই মনে করে বলেই হয়তো হাজার যন্ত্রনা সয়ে বেঁচে থাকা। জীবনের অত্যাশিত বাস্তবতা কি যে কঠিন তা বোধ হয় মানুষ মাত্রই বুঝেন। আপনার মা আপনার এতই প্রিয় যে, এক মুহুর্ত চোখের আড়াল করেননি। কিন্ত একদিন হয়তো দেখা গেল আপনারই কোলে শুয়ে আপনার মা পৃথিবী থেকে বিদায় নিল। আপনি কি তা ভূলেও কোন দিন প্রত্যাশা করেছিলেন ? তারপরও কিন্ত স্বভাবিক ভাবে বেঁচে আছেন। থাকতে হবে , থাকতে হয়। আমার এক বন্ধুরকথা বলি। নাম অর্পি। বিবাহিত । মা হতে যাচ্ছে। স্বামী বিপ্লব চট্রগ্রামে চাকুরী করে বিধায় অর্পি এই অবস্থায় ঢাকার মিরপুরে বাবার বাসায় থাকেন। একদিন বিকালে হঠাৎ অর্পির বাবা ষ্টোক করে। হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেদিন অর্পি কে খুব পরিশ্রম করতে হয়েছে, কারণ অর্পির কোন ভাই নাই। সাড়ে সাত মাসের গর্ভবতী অর্পি সন্ধায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। ভর্তি হতে হয় মাতৃসদনে। ডাক্তার জানায়, জরুরী ভিত্তিতে সীজার না করলে মা ও সন্তান দুজনের জন্যই বিপদ হতে পারে। বিপ্লব কে সংবাদ দেয়া হয়। পরদিন ভোরে বিপ্লব ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে সংবাদ পায় অর্পির বাবা মারা গেছেন। দুপুরের পরে অর্পির সীজার হবে। বিপ্লব দিশেহারা হয়ে যায়,এখন সে কি করবে। কোথায় যাবে ? ভাইহীন অর্পির বাবার লাশ দেখতে হাসপাতালে ? নাকি নিজের স্ত্রী, সন্তানের কাছে। বিপ্লব গাড়ী থেকে নেমে চলে যায় লাশ সামলাতে। অর্পির বাবার লাশ দেখে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে বিপ্লব। কারণ মাত্র ১ মাস আগেই সে তার বাবাকে হারিয়েছে । নিজেকে সে অভিবাবকহীন, অসহায় ভাবছে। এক সময় তার বুকে ব্যথা উঠে এবং ঐ হাসপাতালেই ভর্তি করানো হয়। অর্পির বাবার লাশ বের করতে সময় লাগে অনেক বেশী, কারণ ভর্তির ১ ঘন্টা পর নার্স ট্রলিতে করে সামনে নিয়ে আসে বিপ্লবের লাশ। সীজার শেষে বিকাল নাগাদ অর্পি কিছুটা সুস্থ বোধ করে। দেখে পাশে তার সন্তান নাই। জানতে পারে ,অপরিপক্ক শিশু জন্ম হওয়ায় ইনকিবিউটরে রাখা হয়েছে। সন্ধায় পর নার্স এসে জানায় “ ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেছিল,,,,,, কিন্তু ,,,,, দুঃখিত,,,,”। একই দিনে অর্পি তার তিনটি আশ্রয় হারায়। বাবা, স্বামী, সন্তান। আমাদের সমাজে নারীর বেঁচে থাকার এই তিনটিই স্থান। অর্পি বেঁচে আছে। থাকবে। বাহির থেকে কেউ কি বুঝবে এই বেঁচে থাকার ভিতরকার রূপটি কেমন। আমি জানিনা অর্পি কেমন করে বেঁচে আছে। কেন , কিসের আশায় বেঁেচে আছে। তবু তাকে বেঁচে থাকতে হবে কষ্টের স্মৃতি নিয়ে। প্রতি বছর একই দিনে অর্পি তিনটি কবর জিয়ারত করে যে কবরে প্রতিটি বাসিন্দা তার এক একটা আত্মা। অর্পি বেঁচে আছে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,, এটাই হচ্ছে জীবন ও বাস্তবতা।

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিল গেটসের জীবনের মজার কিছু কাহিনী


মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের জীবন কেটেছে নানা ঘটনার মধ্যদিয়ে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ না করেই মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করা, বিশ্বের সেরা ধনী ব্যক্তির আসনে ওঠা এবং দানশীল হিসেবে খ্যাতিমান হয়েছেন তিনি। কিন্তু একসময়ের কঠোর ব্যবস্থাপক, দুর্দান্ত চিন্তক বিল গেটস কিন্তু খাবার শেষে নিজের প্লেট নিজে ধোয়ার মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পান। তাঁর জীবনে এমন কিছু মজার ঘটনা আছে, যা আনন্দদায়ক। বিভিন্ন বই, ওয়েব ও তাঁর সহকর্মীদের সাক্ষাৎকারে এসব মজার কাহিনি উঠে এসেছে। তাঁর জীবনের এই মজার ঘটনাগুলো নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিজনেস ইনসাইডার। সেখান থেকে কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো: দুষ্টু বিল গেটস কিশোর বিল গেটস কিন্তু একেবারেই শান্তশিষ্ট ছিলেন না। স্কুলে পড়ার সময় তাঁর পছন্দের সব মেয়েকে এক ক্লাসে আনার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। কিশোর বিল গেটসকে স্কুল কর্তৃপক্ষ কম্পিউটার ব্যবহার করে একটি ক্লাস শিডিউল তৈরি করে দিতে বলেছিল। এই সুযোগ কাজে লাগান তিনি। তাঁর পছন্দের সব মেয়েকে দিয়ে নিজের ক্লাস ভরান। হার্ভার্ডে পড়াশোনায় ফাঁকি হার্ভার্ডে পড়ার সময় যেসব কোর্সের জন্য নিবন্ধন করেছিলেন, তার একটিতেও হাজিরা দেননি। এর পরিবর্তে তাঁর ভালো লাগত যেসব ক্লাস, সেখানে বসে যেতেন। তবে তাঁর মুখস্থবিদ্যা ছিল দুর্দান্ত। ফলে চূড়ান্ত পরীক্ষায় তাঁকে আটকায় কে? ফলে ক্লাস না করেও সব সময় এ গ্রেড পাওয়া ছাত্র ছিলেন বিল গেটস। পড়াশোনা থোড়াই কেয়ার হার্ভার্ডে পড়ার সময় ২০ বছর বয়সী বিল গেটস ‘প্যানকেক সর্টিং’ নামের দীর্ঘদিনের এক গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে ফেলেন। তাঁর অধ্যাপক যখন ওই সমাধানটি একাডেমিক পেপারে প্রকাশের কথা বলেন, তখন বিল গেটস মাইক্রোসফট নিয়ে ঝুঁকে পড়েন। হার্ভার্ডের সাবেক অধ্যাপক ক্রিস্টোস পাপাডিমিত্র লিখেছেন, ‘দুই বছর পর যখন বিল গেটসকে ডেকে বলা হলো, তাঁর সমাধানটি গণিতের সাময়িকীতে প্রকাশের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। তখন তাঁর আগ্রহ দেখা যায়নি। সে নিউ মেক্সিকোর আলবুকার্কে মাইক্রোপ্রসেসরের মতো যন্ত্রের জন্য কোড লিখতে ছোট একটি কোম্পানি চালাতে আগ্রহী।’ ক্রিস্টোট লিখেছেন, এ রকম মেধাবী একজন ছেলে গোল্লায় যাচ্ছে বলে ভেবেছিলেন তিনি। গাড়ি চালানোর জন্য জরিমানা জোরে গাড়ি চালানোর জন্য একবার নয়—তিনবার, তা-ও একই পুলিশের কাছে দুইবার জরিমানা দেওয়ার নজির আছে বিল গেটসের। পোরশে ৯১১ গাড়ি চালিয়ে আলবুকার্ক থেকে সিয়াটলে ফেরার সময় তাঁকে জরিমানা করা হয়। আলবুকার্ক মরুভূমিতে সাধারণত খুব জোরে গাড়ি চালাতেন গেটস।একবার এক বন্ধুর কাছ থেকে পোরশে ৯২৮ মডেলের সুপারকার ধার করে এত জোরে চালিয়েছিলেন যে তা ভেঙে যায়। এক বছর লেগেছিল তা মেরামত করতে।গাড়ির নম্বরপ্লেট মনে রাখতেন তিনি মাইক্রোসফটের অফিসে কর্মীরা কখনআসছেন বা যাচ্ছেন, তা গাড়ির নম্বরপ্লেট দেখে মনে রাখতেন বিল গেটস।টেলিগ্রাফকে এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেছিলেন, ‘কর্মীরা কতটা কঠোর পরিশ্রম করছেন, তা যাচাই করতে আমার মান প্রয়োগের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হতো। আমি সবার নম্বরপ্লেট জানতাম। পার্কিংয়ে প্লেট দেখলেই বুঝতে পারতাম কে কখন আসছেন বা যাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠান বড় হয়ে যাওয়ার পর আমি এতে একটু শিথিল হই।’ গেমপোকা কম্পিউটারে গেম খেলা বিল গেটসের পছন্দ। কিন্তু তা একসময় নেশা হয়ে গিয়েছিল। মাইনসুইপার নামের গেমটির এতই ভক্ত ছিলেন যে তাঁর মনোযোগ ঠিক রাখতে গেমটি আনইনস্টল করতে হয়েছিল। একবার যখন এক কর্মী কম্পিউটার স্ক্রিপ্ট লিখে বিল গেটসের গেমের স্কোরকে হারিয়ে দেন, তখন গেটস বলেন, যন্ত্রযদি মানুষের চেয়ে দ্রুতগতিতে কাজ করে, আমরা কীভাবে মর্যাদা রাখব?ইকোনমি ক্লাসের যাত্রী ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বিল গেটস কোম্পানির সব লোক নিয়ে উড়োজাহাজের ইকোনমি ক্লাসে উঠেছেন। কোম্পানির রীতি ছিল সবকর্মীকে ইকোনমি ক্লাসে যেতে হবে। বিল গেটসও তা মেনে চলতেন। গেটসেরএক সহকর্মী লিখেছেন, ১৯৯০ সালে মাইক্রোসফটে যোগ দেওয়ার পর এক ব্যবসায়িক ভ্রমণে বিল গেটসের সঙ্গে তিনি ইকোনমি ক্লাসে গিয়েছিলেন।ওই সময় মাইক্রোসফট বড় প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বড় প্রতিষ্ঠানেরপ্রধান হয়েও কর্মীকে নিয়ে ইকোনমি ক্লাসে যেতে গেটসের মধ্যে কোনো অস্বস্তি দেখেননি তিনি। তিনি মাঝখানের সিটে বসেছিলেন। সারা পথ বই পড়তে পড়তে গিয়েছিলেন গেটস। পরে অবশ্য বিল গেটস নিজস্ব জেট বিমান কিনেছেন। কারিগরিতে ওস্তাদ বিল গেটসকে কারিগরি দিক থেকে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব নয়। কোনো সফটওয়্যার তৈরির মাঝপথে তিনি বাগড়া দেন না। কিন্তু এক মিনিটের জন্যও তাঁকে বোকা বানানো সম্ভব নয়। কারণ, তিনিএকজন সত্যিকারের প্রোগ্রামার। স্বেচ্ছাসেবী খাবারের পর, বিশেষ করেরাতের খাবারের পর নিজের প্লেট নিজে ধুয়ে ফেলেন তিনি। তিনি বলেন, অন্যরা সাহায্য করতে চাইলেও নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করেন তিনি।মজার মানুষ একবার এক সাক্ষাৎকারের সময় হুলুস্থুল কাণ্ড বাধিয়ে বসেন বিল গেটস। সাংবাদিককে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন তিনি। ওই সময় বাথরুমের গিয়ে নিজেকে আটকে রাখেন। যতক্ষণ পর্যন্ত সাংবাদিক ক্ষমা না চান, ততক্ষণ বাথরুমে বসে থাকার হুমকি দেন। তাতে কাজ হয়। মাইক্রোসফটের প্রতিবেদক ম্যারি জো ফলি এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান। ফলি বলেন, মজার একটি ঘটনা এটি। কমডেক্স নামের এক সম্মেলনেরসময় কয়েকজন সাংবাদিক মিলে গেটসের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। ওই সময়কারবিখ্যাত সাংবাদিক জন ডজ খেপিয়ে দেন বিল গেটসকে। অবশ্য তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়ার ধরন ছিল অন্যদের চেয়ে আলাদা। তিনি বিল গেটসকে ‘বাজারের সংজ্ঞা কী’ জাতীয় প্রশ্ন করেন। এতে বিল খেপে যান এবং উঠেগিয়ে বাথরুমে যান এবং নিজেকে আটকে রাখেন। বলেন, জন ক্ষমা না চাইলেআর বেরোবেন না। জন তখন বাথরুমের দরজার সামনে গিয়ে বলেন, ‘আই অ্যাম সরি।’

মাশরাফি বিন মুর্তজার জীবনের গল্প



বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক অন্যতম তারকার নাম মাশরাফি বিন মুর্তজা। দেশের জন্য লড়তে গিয়ে যার পায়ে করা হয়েছে বার বার অস্রপ্রসার, তাওএকবার দুইবার নয় সাত সাতবার। যার যোগ্য নেতৃত্বের ফলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাড়িয়েছে। সেই মাশরাফি বিন মুর্তজার কিছু অজানা কথা আপনাদের জানাবো . বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা নড়াইলে ১৯৮৩ সালের ৫ অক্টোবর নানাবাড়ীতে মাশরাফির জন্ম। তার ডাক নাম ‘কৌশিক’বাবার নাম গোলাম মর্তুজা এবং মার নাম হামিদা বেগম,, ছোটবেলা থেকেই তিনি বাঁধাধরা পড়াশোনার পরিবর্তে খেলাধুলা নিয়ে পড়ে থাকতেন, আর মাঝে মধ্যে চিত্রা নদীতে সাঁতার কাটা।ছোটবেলা থেকে নানা বাড়িতে বড় হন মাশরাফি। সব সময় মামা-মামি তাকে আগলে রাখতেন। ম্যাশ যখন ঢাকায় আসেন, তখন তিনি উঠেছিলেন চাচা চাচীর বাসায়। এরপরই তো আজকের মাশরাফি হয়ে ওঠা। যে কারণে তাদেরকে কোনদিন ভুলতে পারবেন না তিনি। বাইকপ্রিয় মর্তুজাকে সবাই খুব হাসিখুশি আর উদারচেতা মানুষ হিসেবেই জানে। প্রায়ই তিনি বাইক নিয়ে স্থানীয় ব্রিজের এপার-ওপার চক্কর মেরে আসেন। নিজের শহরে তিনি প্রচণ্ড রকমের জনপ্রিয়। এখানে তাকে "প্রিন্স অব হার্টস" বলা হয়। বিবাহ; এ শহরেরই সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ার সময় সুমনা হক সুমির সাথে তার পরিচয় হয়। দু'জনে ২০০৬ সালে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তিনি দুই সন্তানের জনক, ছেলে সাহেল ও মেয়ে হুমায়রা ক্রিকেটে অভিষেক ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ২০০১ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজেই অভিষেক হয় তার, ৮ নভেম্বর টেস্ট অভিষেক ম্যাচে ১০৬ রানে ৪টি উইকেট নিয়েছিলেন এর পর ২৩ নভেম্বর ওয়ানডে অভিষেক ম্যাচে ৮ ওভার ২ বলে ২৬ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট এবং T20 অভিষেক ২৮ নভেম্বর ২০০৬ অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির রেকর্ড ম্যাচের সংখ্যা জয়পরাজয় ড্র টেস্ট ১ ১ ০ ০ ওডিআই 37 ২৩ ১৪ –0 টি২০আই ২৬ ৯ ১৬–0 মাশরাফির সপ্ন বাংলাদেশের রঙিন পোশাকের অধিনায়কের এখন একটাইস্বপ্ন ছেলে-মেয়েকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন। এছাড়া দেশের হয়ে যতদিন সম্ভব খেলে যেতে চান তিনি। আরো অনেক সাফল্য এনে দিতে চান লাল-সবুজ জার্সিধারীদের।

যে গল্পের নাম ছিল না


২০০৮ সাল… ঢাকায় আসি ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য । পরীক্ষা দেইএকটা Public uni তে… সেখানে পরিচয় হয় এক বড় ভাইএর সাথে…উনি আমাকে একটা ভর্তির জন্য গাইড বই দেয়…আর একটা কার্ড এর পিছনে তার সেল নাম্বার লিখে দেয়…প্রয়োজনে ফোন করার জন্য…পরীক্ষা দেই কিন্তু চান্স হয় না সেটা জানিও ওই ভাইয়ার মাধ্যমে…এর পর আর কথা হয় নি অনেক দিন… একদিন হোস্টেলে পাশের রুমে বসে আড্ডা শেষে রুমে এসে দেখি আমার ফোনে ওই ভাইয়ার মিসড কল…কল ব্যাক করি…উনি ফোন ধরে বলে যে ভুলে কল চলে গেছে….তবুও আমাদের কথা হয়…এই আমাদের বন্ধুত্ব শুরু….বেশ কয়েক দিন আমাদের টানা কথা হয়…তারপর একদিন দেখা করব বলে ঠিক করি….এতো দিনে আমাদের বন্ধুত্ব “ভাইয়া” থেকে “নাম” আর “আপনি” থেকে “তুমি”তে নামে… অনেক দিন পরের ঘটনা বলে এতো বেশি তার চেহারা আমার মনে ছিলো না….তাই দেখেই মনে মনে বললাম “ইস্ এতো কালো একটা ছেলের সাথে এতোদিন কথা বলছি???” তবুও কথা বললাম… কিন্তু তার সম্পর্কে পুরো ধারনাই বদলে গেলো আমার….এতো ভালো একটা ছেলে….প্রথম দেখায় কোন শালীনতার অভাব ছিল না….এভাবেই কেটে যায় ৩০ মিনিটের মতো…. এবার থেকে শুরু হলো রাতে দিনে কথা বলা….একজন বন্ধু এতো ভালো হয় কি করে তখন আসলেই বুঝতাম না….হিসেব কম মিলানোর চেস্টা করিনি….তবুও পারিনি… যাই হোক আমরা এরপর প্রতিদিন হাটতাম ফার্মগেটের জাহানারা গার্ডেনের রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা….দেড় টা মাসের এমন কোন দিন ছিলো না যেদিন আমরা হাটিনি একসাথে…. কোন একদিন আমাদের দেখে ফেলেছিলো আমার এক বড় ভাই…গুব্লেট টা সেই বাধায়….বাড়ি বলে দেয়…আমারতো তখন অবস্থা “ঈশ্বর আমাকে উঠাইয়া নাও,নয়তো দড়ি ফেলাও…একা একা উঠে যাই…”..খুব কষ্টে বাড়ি বুঝিয়েছিলাম যে সে শুধু আমার বন্ধু… একদিন হাটতে হাটতে তার পাগলামির মাত্রা এতো টা উপরে উঠে গিয়েছিলো যে আমি তাকে বলতে বাধ্য হলাম.. “এই তুমিকি আমাকে ভালোবাসো???”…..সে আমার দিকে পেছন ফিরে উল্টা ঘুরে আমাকে বলল“হুমম বাসি..” আবার সাথে সাথে আমার দিকে ফিরে বলল না না মজা করছিলাম….কিন্তু এতো দিনে আমি তার চোখের ভাষা পড়তে শিখে গেছি যে….বুঝলাম আজ কিছু বুঝি হয়ে গেলো আমার….. আমি যেনো আরো Dependable হয়ে গেলাম তার প্রতি…সেই কালো ছেলেটার প্রতি…কবে তাকে ভালোবেসেছিলাম জানি না….তবে এটা জানি আজ আমাদের ভালোবাসার ২ বছর ৭ মাস চলছে….আজ আমরা আছি কিছু সুখ, কিছুদুঃখ, স্বপ্ন দেখা আর কিছু আবদার মেটানোর মধ্যে….আর অমার বাড়িতে যেখানে ওকে দেখা হতো আমার শত্রু হিসেবে….সেই বাড়ির লোকজন ই জানে আমার একটাই মাত্র বন্ধু এই পৃথীবিতে….. কতো কথা বলে ফেললাম একটা কথা বলি এখন আমরা কেউ ই জানি না আমাদের এই ভালোবাসার শেষ কোথায়…..আমাদের ধর্ম টাই যে আলাদা……..!!! তারপরও কেনো যেনো তাকেই ভালোবাসি……..শুধুই তাকে……

জীবনের গল্প (হত্যাকারী)

ভালোবাসার অনুভূতি কখনো বলে কয়ে আসেনা। কে কখন কার ভালোবাসার রংে নিজেকে রাংাবে সেটা সে নিজেও জানেনা। তখন ক্লাস নাইনে পড়তাম। একদিন স্কুলে গিয়ে শুনলাম সোহা নামে আমাদের সাথে যে মেয়েটি পড়তো সে নাকি উৎপল রায় নামের এক হিন্দু ছেলের হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। কথাটা শুনে অবাক হয়েছিলাম। কারণ, এতোদিন দেখেছি হিন্দু মেয়েরা মুসলমান ছেলেদের সংে বাড়ি ছাড়ে কিন্তু সেবারই প্রথম দেখলামমুসলমান মেয়েরাও হিন্দু ছেলেদের ভালোবাসা পেতে পরিবারের অন্য সদস্যদের অভিশাপ কুড়ায়। তাছাড়া রক্ষণশীল মুসলমান পরিবারের মেয়ে ছিল সোহা। পরিবারের কড়া শাসন আর নিয়মনীতি মেনে চলতে হতো তাকে। ক্লাস সিক্স থেকেই দেখেছিলাম বোরখা পড়ে আসতে। কোনোদিন ওর মুখ দেখতে পাইনি আমরা। ওর মুখ দেখার ব্যাপারে ছেলেদের মধ্যে চাপা কৌতূহল ছিল। তারপরেও রক্ষণশীল পরিবারের পরদাকে ভেদ করে ভালোবাসা চুপিচুপি প্রবেশ করেছিল সোহার হৃদয়ে। আর হিন্দু ছেলের সাথে মেয়ের সম্পর্ক সোহার বাবা-মা মেনে নেয়নি। তাই পুরনো সব বন্ধন ছিন্ন করে সোহা জুড়ে নেয় নতুন সংযোগ। স্কুল থেকে বন্ধুরা যাচ্ছিল সোহা-উৎপলের সংসার দেখতে। তাদের সাথে আমিও গেলাম। প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে পৌছালাম উৎপল রায়ের বাড়িতে। বেশ বড় পাকা বাড়ি। আসবাবপত্রেরও অভাব ছিল না। বাড়িতে সোহা আর উৎপল ছাড়া কেউ ছিল না। উৎপলের বাবা-মা গত হয়েছেন কয়েক বছর আগেই। বোরখা পরে স্কুলে যেত বলে কোনোদিন সোহার মুখ দেখতে পেতাম না। সেইদিন দেখলাম।দেখে চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। দেখতে একদম সাক্ষাৎ পরীদের রাণী। এমন একটা মুখ পেলে বাবা-মার শাসন উপেক্ষা করে, রাজপ্রাসাদ ছেড়ে যেকোনো রাজপুত্রও অনায়াসে তাকে বিয়ে করতো। আমরা কিছুক্ষণ সেখানে থেকে সোহা-উৎপলের সুন্দর জীবন কামনা করে যার যার বাড়ি ফিরে গেলাম।ক্লাস নাইন পেরিয়ে কখন যে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে উঠলাম কিছুই বুঝতেপারলাম না। ডিসেম্বরের শেষের দিক। শীতকালীন ছুটি কাটাতে বাড়ি গেলাম। একদিন সন্ধ্যে বেলা এক বন্ধুকে নিয়ে হাটছিলাম। বন্ধুই আমাকে জানালো পাশের গ্রামের একটি লোকের কথা। যে নাকি জুয়া খেলে সবকিছু হারিয়ে সর্বশেষ বাজি ধরেছে নিজের বৌকে। সন্ধ্যার পর লোকটারবাড়িতে বসবে জুয়ার আসর। ব্যাপারটা খুব গোপনীয়, আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং মনে হলো। তাই বন্ধুকে নিয়ে কৌতূহল মেটাতে ছুটলাম সেইজুয়াড়ির বাড়িতে। আমাদের যেতে দেরী হয়েছিল। খেলা প্রায় শেষের দিকে।দর্শক আমাদের সহ পাঁচজন। অর্থাৎ, খেলাটা গোপনেই হচ্ছিল। বৌ বাজি ধরা লোকটা আর ঐ বাড়িটাকে আমার খুব চেনা চেনা লাগছিল। যথাসময়ে খেলাশেষ হলো। বাজিধরা লোকটা হেরে গেল। বিজয়ীরা পুরষ্কার চাইলো। লোকটা তার বৌকে আনতে বাড়ির ভেতরে গেল। বেশ কিছু সময় পার হয়ে গেল। লোকটা আসছিল না দেখে আমি আর আমার বন্ধু বাদে সবাই বাড়ির ভেতরে ঢুকলো। হঠাৎ তারা চিৎকার দিয়ে যে যার মতো ছুটে পালালো। কৌতূহলী হয়ে ভেতরেঢুকলাম এবং যা দেখলাম তাতে দুজনই বিস্মিত হলাম। বৌ বাজিধরা লোকটারশরীর ও মাথা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মেঝেতে পড়ে ছিল। আর পাশেই দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে পা ছড়িয়ে বসে একটি মেয়ে কাঁদছিল। ডান হাতের কাছে একটি রক্তমাখা ধারালো দা ফেলা। মেয়েটিকে চিনতে অসুবিধা হলোনা। মেয়েটা ছিল উৎপল রায়ের হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে পালানো আমার সেই বান্ধবী সোহা। উৎপলকে আগে চিনতে পারিনি। কারণ, ওর মুখ দাড়ি, গোফে ভরা ছিল। তাছাড়া, নেশা করে ওর চেহারা নষ্ট হয়ে গেছে। পুরো বিষয়টা আমার কাছেপরিস্কার হলো। তবে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম। একটু পরেই পুলিশ এলো। বুঝতে পারলাম পালিয়ে যাওয়া লোকগুলো পুলিশে খবর দিয়েছে।একটা পুলিশ আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, কে খুন করেছে? সংে সংে সোহা ক্ষিপ্রগতিতে বললো, "ওকে কি জিজ্ঞেস করছেন? আমি খুনি, খুন আমি করেছি, আমাকে ধরে নিয়ে যান। অনেক ভালোবেসেছিলাম ওকে। যার কোনো মূল্য দেয়া তো দূরে থাক, পায়ের নিচে পিষে খুন করেছে।আজ তার শোধ নিলাম।" সোহাকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে গেল পুলিশ। কেবল তাকিয়ে দেখলাম।কারণ, এটাতো স্বাভাবিক বিষয়। খুন করলে তো জেলে যেতেই হবে। তাছাড়া,জানতাম এদেশে ভালোবাসা হত্যা করলে কোনো দোষ হয়না কিন্তু ভালোবাসারহত্যাকারীকে হত্যা করলে হাতকড়া পরানোর লোকের অভাব হয় না।"Someone, Somewhere is waiting for you" But, you have to find out the right person and stay a long away from cheater.
অাপনাদের সাথে ঘটে যাওয়া যেকোনো গল্প অামাদেী মাধ্যমো শেয়াী করতে অামাদের ফেসবুক পেজ এ মেসেজ দিন।


জীবনের গল্প (অনিল ছোয়া)

চারিদিক নিস্তব্ধ। পশ্চিম আকাশে সূর্য হেলে গেছে। গৌধুলির লাল আভার বিকিরণ হচ্ছে নদীর ঢেউ এ। . আর অনিলের চোখের অশ্রুফোটা নদীতেপড়ছে ব্রীজের উপর থেকে।তাতে ক্ষুদ্র তরঙ্গের সৃষ্টি হচ্ছে নদীর ঢেউ এর সাথে।কিন্তু সেই ক্ষুদ্র ঢেউ নদীর ঢেউয়ের কাছে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ঠিক এভাই ছোয়ার জীবন থেকে বিলীন হয়ে গেছে অনিল।কত স্বপ্ন সাজিয়ে রেখেছিল অনিল ছোয়াকে ভালো রাখার জন্য।কত আশার প্রদীপ জ্বলেছিল।কিন্তু সবকিছু থেকে এখন কেবলই ধোয়া উঠছে। . কারন হলো এখনো কোনচাকরি হলো না অনিলের ।অনিল চাকরির জন্য হন্নে হয়ে বেড়িয়েছে এই দুইটা বছর কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাকরি হলো না।আজকেও একটা কোম্পানি থেকে ফোন করার কথা কিন্তু করে নি।করলে হয়তো ছোয়ার বিয়েটা আটকানো যেতো কিন্তু শেষ চেষ্টাটাও করতে পারলো না অনিল। নিজেকে খুব ব্যর্থমনে হচ্ছে।জিবনটাকে অর্থহীন লাগছে, চরম হতাশায় ডুবে গেছে অনিল।ভালোবাসাটা কি চাকরির সমানুপাতিক আর অর্থের ব্যস্তানুপাতিক। সেখানে ছলনা শব্দটা ধ্রুবক হলে সমানের ওপাশে ছোয়ার নামটা সহজেই বসানো যাবে।কত সহজে চলে গেল ছোয়া। এসব ভাবতে ভাবতে ফুটপাতের ধারে হেটে চলছে অনিল।কিছুটা আনমনে হয়ে পা চালাচ্ছে।এমন সময় মাথার উপর বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনা ঘটেছে সেদিকে খেয়াল নেই অনিলের । এমন সময় ধাক্কা দিয়ে কেউ সরিয়ে দেয় অনিলকে।তাকাতেই দেখে একটা মেয়ে। নাম মিম সেখান থেকেই মিমের সাথে পরিচয় হয় অনিলের। . অনিলকে চাকরি পাওয়ায় সহায়তা মিম।আস্তে আস্তে সম্পর্কের স্পর্শ টের পাায় দুজন। ,৫ বছর পর, আজ অনিল আর মিম এর ৩য় বিবাহ বার্ষিকী। অনিল দূর থেকে তার স্ত্রীকে লক্ষ্য করছে কত সুন্দর লাগছে তার বউটাকে। কত নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে ফেলেছে মিম তাকে। , আজ ছোয়ার কথা মনে পড়েকিছুটা বাকা হাসি আসে অনিলের ঠোটের কোণে।আর মনে মনে ধন্যবাদ দেয় ছোয়াকে।ছোয়া চলে না গেলে হয়ত এমন দিন অনিলের জিবনে আসতো কি না সেটা কল্পনাতীত।



গল্পটি লিখেছেনঃ
হাফিজ অাব্দুর রহমান

অাপনাদের জীবনের গল্প শেয়ার করতে অামাদের ফেসবুক পেজ এ মেসেজ করুন।




banglablog2020.blogspot.com

রাজ কন্যার বোনো হাসের গল্প

অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক দেশে ছিল এক রাজা, আর ছিল এক রানি। সাগরের তীর হতে দেশটি ছিল অনেক দূরে। রাজার ছিল এগারোটি ছেলে আর একটি মেয়ে। মেয়েটিকে রাজা অনেক আদর করত। রাজা আদর করে তার নাম রাখল এলিজা। রানি আর ছেলেমেয়ে নিয়ে রাজার ছিল খুব সুখের সংসার। রাজ্যজুড়ে তার ছিল অনেক সুনাম। প্রজারা রাজাকে খুব ভালোবাসে। একদিন রাজার সংসারে দুঃখ নেমে এল। হঠাৎ করে রানি মারা গেল। রাজ্যজুড়ে দুঃখের বন্যা বয়ে গেল। কিন্তু রানি ছাড়া তো রাজ্য চলে না। তাই মনে অনেক দুঃখ নিয়ে রাজা আবার বিয়ে করলেন। কিন্তু নতুন রানি ছিল খুব দুষ্ট। সে রাজার বারো ছেলেমেয়েকে একদম আদর করত না। সে সবসময় তাদের বিরুদ্ধে রাজার কাছে নানা কথা বলত। এভাবে বলতে বলতে রাজার মন একসময় বিষিয়ে গেল। রাজা রানির কথায় এলিজাকে গ্রামে পাঠিয়ে দিল। সেখানে এলিজা চাষিদের সঙ্গে কাজ করবে, তাদের সঙ্গেই জীবন কাটাবে। রানি ছেলেদের সম্পর্কে আরও অনেক খারাপ কথা বলল রাজারকাছে। এক সময় রাজা তার এগারো ছেলেকে ত্যাগ করল। এতেও রানির মন খুশি হল না। ছেলেদের দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিতে হবে। ওরা যাতে এ রাজ্যে আর কখনও আসতে না পারে। নতুন রানি ভেতরে ভেতরে অনেক জাদু জানত। একদিন সে জাদু করে ছেলেদের উদ্দেশ্যে বলল, “ইচিং বিচিং ফুড়ুৎ! এ মুহূর্তে তোমরা বন্য পাখি হয়ে যাবে এবং আর কখনও কথা বলতেপারবে না।” একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে রাজপুত্ররা এগারোটি চমৎকার বুনোহাঁসে পরিণত হল; আর উড়ে চলে গেল বহুদূরে। দিন যায়, মাস যায়। এলিজা এখন অনেক বড় হয়েছে। তার বয়স এখন ১৫। একদিন এলিজাকে দেখার জন্য রাজার মন খুব ছটফট করছিল। তখন সে দূতকে পাঠিয়ে দিল এলিজার কাছে। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে এলিজা রওনা হয়ে গেল। কিন্তু দুষ্ট রানি ছদ্মবেশে পথে লুকিয়ে রইল। এলিজা এ রাস্তা দিয়েই আসছিল। রানি তাকে পেয়ে তার মুখে কাঠবাদামের কালচে রস ঢেলে দিল। তারপর এলিজার চুলগুলো ভালোভাবে এলোমেলো করে দিল। এলিজা প্রাসাদে ঢুকে রাজাকে কুর্ণিশ করল। কিন্তু কোনোভাবেই রাজা এলিজাকে চিনতে পারল না। এ ঘটনায় এলিজা খুব দুঃখ পেল। সে রাজপ্রাসাদ থেকে বের হয়ে কাঁদতে কাঁদতে মেঠোপথ ধরে এগোল। আকাশে যখন সূর্য ডুবে ডুবে, এলিজা তখন একটা বড় বনের পাশে এল। সারাদিনের ক্লান্তি তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। সে বনের পাশে ঘাসে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। যখন তার ঘুম ভাঙল তখনসে দেখতে পেল তার পাশ দিয়ে একটা নদী বইছে। এ নদীর পানি খুব স্বচ্ছ, ঝকঝক করছে। এলিজা ঝটপট পানিতে নেমে গেল এবং ডুব দিয়ে গোসলকরল। নদীর স্বচ্ছ পানি এলিজার মুখের কালি ধুয়ে নিল। সঙ্গে সঙ্গে এলিজা আবার আগের মতো রূপসী হয়ে গেল। রাজকুমারী এলিজা আবার বনের ভেতর দিয়ে হাঁটা শুরু করল। কিছুদূর যেতেই তার সঙ্গে দেখা হল এক বুড়ির। এলিজা বুড়িকে সালাম দিয়ে তার ভাইদের কথা জিজ্ঞেস করল। বুড়িবলল, “আমি এপথে কোনো রাজপুত্রকে যেতে দেখিনি। তবে আমি সাগর সৈকতে সোনার মুকুট পরা এগারোটি বুনোহাঁস দেখেছি।” এলিজা নদীর স্রোতের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলতে শুরু করল। এক সময় নদী এসে সাগরে পড়ল। এলিজারপথচলা শেষ হল। সৈকতে ঘুরতে ঘুরতে সে বুনোহাঁসের এগারোটি সাদা পালকপেল। আর সন্ধের সময় সে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাঁসগুলোকে দেখতে পেল। মাথায় সোনার মুকুট পরা এগারোটি বুনোহাঁস লাইন ধরে উড়ে যাচ্ছে; দেখলে মনে হয় যেন একটি সাদা ফিতে উড়ছে। হাঁসগুলো ধীরে ধীরে নিচে নেমে এলে এলিজা পাশে এসে দাঁড়াল। সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে অস্ত গেলতখন পাখিগুলোর শরীর থেকে সব পালক ঝরে গেল এবং এলিজা তার এগারো ভাইকে ফেরত পেল। বড় ভাই এলিজাকে জানাল যে সূর্য ডুবে গেলে তারা মানুষ হয়ে যায়। কিন্তু সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ওরা আবার পাখি হয়ে যাবে। সে আরও জানাল, ওরা সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর ওপাড়ে থাকে। তবে বছরে ওরা মাত্র আটদিনের জন্য প্রিয় মাতৃভূমিতে আসতে পারে। পরদিন ভোরে ভাইয়ের একটা চাদরে এলিজাকে বসাল। এরপর চাদরের কোণগুলোতে কামড়দিয়ে ধরে এলিজাকে নিয়ে উড়ে চলল সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর ওপাড়ে। এলিজাকে নিয়ে ওরা সারাদিন ধরে ওড়ে চলল। ঠিক সন্ধের আগে ওরা নেমে এল একটা সবুজ দ্বীপে। দ্বীপটি খুব সুন্দর। চারদিকে সারাদিন সারারাত সাগরের ঢেউ খেলা করে। সারাদিন পরিশ্রমের পর ভাইয়েরা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ সাগরের দিকে তাকিয়ে থেকে এক সময় এলিজাও ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমের মাঝে এলিজা এক পরিকে স্বপ্নে দেখল। পরিরনাম মরগান-লি-ফি। পরি এলিজাকে বলল, “তুমি ইচ্ছে করলে তোমার ভাইদের বাঁচাতে পার। তুমি যদি তাদের প্রত্যেকের জন্য একটা করে জামা বুনে দিতে পার তাহলে তারা আবার মানুষ হয়ে যাবে। তবে এ জন্য কাঁটাওয়ালা পাতা থেকে সুতা তুলতে হবে এবং সেই সুতা দিয়ে জামা বুনতে হবে।” পরির কথা শুনে এলিজা খুব খুশি হল। সে বলল, “আমি আজই জামা বুনার কাজ শুরু করতে চাই।” পরি বলল, ‘এখানে আরও একটি কঠিন শর্ত আছে। সবগুলো জামা বানানো শেষ হবার আগে মুখে কোনো কথা বলা যাবে না। যদি তুমি একটা কথাও বল, তাহলে তোমার ভাইয়েরা মারা যাবে।”পরির কাছে একথা শুনে এলিজা ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল। সে জঙ্গল থেকে বিভিন্ন রংয়ের কাঁটাওয়ালা পাতা জোগাড় করে আনল। তারপর সেগুলো থেকে অনেক কষ্টে সুতা বের করতে শুরু করল। তার হাতে কাঁটা বিঁধে বিঁধে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগল। তবু সে থামল না। সেদিন বনে এক রাজা এসেছিলেন শিকার করতে। তিনি এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখতেপেলেন এলিজাকে। অপূর্ব সুন্দরী একটি মেয়ে এই গহীন অরণ্যে বসে কী করছে? রাজার খুব কৌতূহল হল। তিনি এলিজার কাছে গিয়ে সে কী করছে তাজানতে চাইলেন। কিন্তু এলিজা কোনো উত্তর দিল না। কারণ সে জানে, যদিসে একটি কথাও বলে, তাহলে তার ভাইয়েরা মারা যাবে। অসহায় ও বোবা ভেবে মেয়েটির প্রতি রাজার অনেক দয়া হল। তিনি এলিজাকে ঘোড়ায় উঠিয়ে রাজপ্রাসাদে নিয়ে এলেন। কিছুদিন পর রাজা এলিজা রূপেগুণে মুগ্ধ হয়েতাকে বিয়ে করলেন। রানি হয়েও এলিজার মন ভালো হল না। সে সবসময় কাঁদে। এলিজার কান্না থামাবার জন্য রাজা জঙ্গল থেকে এলিজার বানানোজামা, রেখে আসা সুতা ও কাঁটাওয়ালা পাতাগুলো আনিয়ে দিলেন। এলিজার এসব কীর্তি দেখে রাজার এক মন্ত্রী তাকে সন্দেহের চোখে দেখে। মন্ত্রী ভাবছে, এলিজা একজন জাদুকর। সে এলিজাকে সবসময় চোখে চোখে রাখে। কথাটি সে রাজার কানেও তুলেছে। কিন্তু রাজা সে কথা বিশ্বাস করেননি। এলিজা রাতভর জেগে জেগে ভাইদের জন্য জামা বোনে। একদিন গভীররাতে তার সুতা ফুরিয়ে গেল। সে দৌড়ে প্রাসাদের বাইরে এল কাঁটাওয়ালাপাতা সংগ্রহ করার জন্য। এলিজা দ্রুতপায়ে গোরস্থানের দিকে গেল। সেখান থেকে সে অনেক পাতা সংগ্রহ করে নিয়ে এল। মন্ত্রী এলিজাকে রাতে গোরস্থানে যেতে দেখে রাজাকে তা জানাল। পরদিন এলিজা যখন আবার গোরস্থানে গেল তখন রাজা নিজের চোখে তা দেখলেন। এখানে সাধারণত রাতের বেলা জাদুকররা ব্যাঙ ধরতে আসে নানারকম জাদু করার জন্য। নিজের চোখে এলিজাকে এখানে দেখে রাজা তাঁর মন্ত্রীর কথা বিশ্বাস করলেন। এলিজা অবশ্যই একজন জাদুকর। নইলে সে এত রাতে একা একা গোরস্থানে যেত না। রাজা এলিজার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করলেন। এলিজাকে জেলখানায় বন্দি করা হল। তবে সে যে কদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন জামা বুনে সময় কাটাতে পারবে। সে জন্য জামা, সুতা ও পাতাগুলো তার সঙ্গে দেওয়া হল। এলিজা ভাবল, হয়ত এ জীবনে আর ভাইদের সঙ্গে তার দেখা হবে না। তবু সে মনোযোগ দিয়ে জামা বুনতে থাকল। ধীরে ধীরে এলিজার জীবনেরশেষদিন ঘনিয়ে এল। তাকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হল। রাজ্যের মানুষের ভিড় পড়ে গেল চারদিকে। এলিজার চেহারা আলুথালু। চুল এলোমেলোহয়ে আছে। এলিজার কোনোদিকে খেয়াল নেই। সে দ্রুতহাতে জামা বুনে যাচ্ছে। মরার আগে জামা বুনে শেষ করতে হবে। কোনোদিন যদি ওর ভাইয়েরাএগুলো পায় তাহলে তারা আবার রাজকুমার হবে। চারদিকে দেখতে আসা দুষ্টলোকেরা বলতে শুরু করল, “দেখো, দেখো, জাদুকর মেয়ের অবস্থা। চল আমরাওর জাদুর জামাগুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলি।” এই বলে দুষ্ট লোকেরা সত্যি সত্যি এলিজার দিকে আসতে শুরু করল। এলিজা ভয় পেয়ে গেল। সত্যি সত্যিকি ওরা জামা ছিঁড়ে ফেলবে? ঠিক সে সময় আকাশ থেকে এগারটি বুনোহাঁস নেমে এল এবং এলিজার চারপাশ ঘিরে দাঁড়াল। এলিজার তখন আর সময় নেই। শেষবারের মতো ভাইদের দেখে সে খুব খুশি হল। সে তাড়াতাড়ি করে তার বুনা এগারটি জামা এগারো ভাইয়ের দিকে ছুড়ে দিল। আর অমনি বুনোহাঁসগুলো সুদর্শন রাজপুত্র হয়ে গেল। এখন এলিজা কথা বলতে পারবে। সে হাসিমুখে চিৎকার দিয়ে রাজাকে বলল, “এখন আর আমার কোনো অসুবিধা নেই। আমি এখন কথা বলতে পারব। আমার কোনো দোষ নেই।” বোনের সঙ্গে সঙ্গে এগারো ভাই একসুরে বলল, “আমাদের বোন নির্দোষ।” বড় ভাই এগিয়ে এসে রাজাকে সব ঘটনা বলল। বড় ভাইয়ের কথা শুনে রাজা খুব খুশি হলেন। তিনি এলিজাকে আবার আপন করে নিলেন। তিনি এলিজাকে খুশি হয়ে একটা সোনার পালক উপহার দিলেন। রাজা এবং এলিজা তার এগারো ভাইকেসঙ্গে নিয়ে প্রাসাদে ফিরে এল। রাজ্যের মানুষ এ খবর শুনে খুব খুশি হল। রাজ্যজুড়ে বয়ে গেল আনন্দের ঢেউ। রাজার বাড়িতে এগারো ভাইকে নিয়ে এগারো দিন ও এগারো রাত উৎসব চলল।