Sunday, July 8, 2018

জীবন ও বাস্তবতা



জীবনের বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর। এটাই জীবন। জীবনের বাস্তবতার বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যতই নিষ্ঠুর হউক বা যতই কষ্ট হউক তা সয়ে নিতে হয়, মেনে নিতে হয় জীবনের প্রয়োজনেই। জীবনে কষ্ট আসলে মানসিক ভাকে যতটুকু ভেঙ্গে পড়বে জীবন তার দ্বিগুন পিছিয়ে যাবে। জীবনের সকল দূঃখ কষ্ট ও বাস্তবতাকে জীবনের অংশ হিসাবে মেনে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করার নামই হচ্ছে সুখ। জীবনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে , সে কখনও এক পথে চলেনা। মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী চলেনা।জীবনের এই বৈশিষ্ট্যকে যারা মেনে নিতে পারেনা তারাই হতাশ জীবন যাপন করে। যারা মেনে নিতে পারে তারাই সুখী । কিন্তু সবাই কি পারে সব অবস্থা মেনে নিতে ? কিন্তু মেনে নিতে হয় জীবনের জন্য। জীবনেরবাস্তবতা যারা মেনে নেয় তারা জীবনের আনন্দগুলো উপভোগ করে, জীবনকেউপভোগ করে। কষ্ট ও দুঃখগুলো থেকে তারা শিক্ষা নেয়। গৃহীত শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে তারা জীবন সাজায়। ফলে তাদের জীবনের দুঃখ কষ্টগুলো বাহির থেকে দেখা যায়না বা তারা তা দেখাতে চায়না। দুঃখ কষ্ট তারা সামলে নিয়ে সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহন করে। তাদের সহনমাত্রা অনেক বেশী থাকায় একটা সময় এসে দুঃখ কষ্ট তাদেরকে ছুঁতে চায়না , ছুঁয় না। আমরা বলি চীরসূখী মানুষ । আসলে তা নয়। তারা দুঃখ কষ্টকে জীবনের অংশ হিসাবে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেয়। তারা অনেক কষ্ট সয়ে , মেনে নিয়ে কষ্টকে জয় করে নিয়েছে। জীবনেরবাস্তবতায় আসা কষ্টকে মেনে না নিয়ে হতাশ হলেই জীবন হতাশ হয়। কিছু কিছু কষ্ট জীবনে আসে যা ক্ষুদ্র জীবনের কাছে পাহাড় তুল্য। হতাশ নয়, ধৈর্য্য ও সময়ই অনেক সমস্যার সমাধান দেয়। কষ্ট কখনও কখনও এমন ভাবে আসে যখন চোখ বন্ধ হয়ে যায়। কান বধির হয়ে যায়।কন্ঠ বোবা হয়ে যায়। বুদ্ধি নির্বোধ হয়ে যায়। শরীর পঙ্গু হয়ে যায়। দিশেহারা জীবনে সব পরিকল্পনা ছাড়খার হয়ে যায়। তারপরও মানুষকে বেঁচে থাকতে হয় জীবনের অদৃশ্য প্রয়োজনে। আমি জানিনা কী সে প্রয়োজন। জীবনের কোথায় যেন কিসের একটা অদৃশ্য টান।আমার অনুপস্থিতিতে সব চলবে যথারীতি। তারপরও মনে হয় আমিই যেন সব সমস্যা সমাধানের একমাত্র ভরষা। মনে হয়, আমি ছাড়া সমস্যা সমাধানের আর কেউ নাই। আমাকে ছাড়া ? অসম্ভব। এই মনে করে বলেই হয়তো হাজার যন্ত্রনা সয়ে বেঁচে থাকা। জীবনের অত্যাশিত বাস্তবতা কি যে কঠিন তা বোধ হয় মানুষ মাত্রই বুঝেন। আপনার মা আপনার এতই প্রিয় যে, এক মুহুর্ত চোখের আড়াল করেননি। কিন্ত একদিন হয়তো দেখা গেল আপনারই কোলে শুয়ে আপনার মা পৃথিবী থেকে বিদায় নিল। আপনি কি তা ভূলেও কোন দিন প্রত্যাশা করেছিলেন ? তারপরও কিন্ত স্বভাবিক ভাবে বেঁচে আছেন। থাকতে হবে , থাকতে হয়। আমার এক বন্ধুরকথা বলি। নাম অর্পি। বিবাহিত । মা হতে যাচ্ছে। স্বামী বিপ্লব চট্রগ্রামে চাকুরী করে বিধায় অর্পি এই অবস্থায় ঢাকার মিরপুরে বাবার বাসায় থাকেন। একদিন বিকালে হঠাৎ অর্পির বাবা ষ্টোক করে। হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেদিন অর্পি কে খুব পরিশ্রম করতে হয়েছে, কারণ অর্পির কোন ভাই নাই। সাড়ে সাত মাসের গর্ভবতী অর্পি সন্ধায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। ভর্তি হতে হয় মাতৃসদনে। ডাক্তার জানায়, জরুরী ভিত্তিতে সীজার না করলে মা ও সন্তান দুজনের জন্যই বিপদ হতে পারে। বিপ্লব কে সংবাদ দেয়া হয়। পরদিন ভোরে বিপ্লব ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে সংবাদ পায় অর্পির বাবা মারা গেছেন। দুপুরের পরে অর্পির সীজার হবে। বিপ্লব দিশেহারা হয়ে যায়,এখন সে কি করবে। কোথায় যাবে ? ভাইহীন অর্পির বাবার লাশ দেখতে হাসপাতালে ? নাকি নিজের স্ত্রী, সন্তানের কাছে। বিপ্লব গাড়ী থেকে নেমে চলে যায় লাশ সামলাতে। অর্পির বাবার লাশ দেখে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে বিপ্লব। কারণ মাত্র ১ মাস আগেই সে তার বাবাকে হারিয়েছে । নিজেকে সে অভিবাবকহীন, অসহায় ভাবছে। এক সময় তার বুকে ব্যথা উঠে এবং ঐ হাসপাতালেই ভর্তি করানো হয়। অর্পির বাবার লাশ বের করতে সময় লাগে অনেক বেশী, কারণ ভর্তির ১ ঘন্টা পর নার্স ট্রলিতে করে সামনে নিয়ে আসে বিপ্লবের লাশ। সীজার শেষে বিকাল নাগাদ অর্পি কিছুটা সুস্থ বোধ করে। দেখে পাশে তার সন্তান নাই। জানতে পারে ,অপরিপক্ক শিশু জন্ম হওয়ায় ইনকিবিউটরে রাখা হয়েছে। সন্ধায় পর নার্স এসে জানায় “ ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেছিল,,,,,, কিন্তু ,,,,, দুঃখিত,,,,”। একই দিনে অর্পি তার তিনটি আশ্রয় হারায়। বাবা, স্বামী, সন্তান। আমাদের সমাজে নারীর বেঁচে থাকার এই তিনটিই স্থান। অর্পি বেঁচে আছে। থাকবে। বাহির থেকে কেউ কি বুঝবে এই বেঁচে থাকার ভিতরকার রূপটি কেমন। আমি জানিনা অর্পি কেমন করে বেঁচে আছে। কেন , কিসের আশায় বেঁেচে আছে। তবু তাকে বেঁচে থাকতে হবে কষ্টের স্মৃতি নিয়ে। প্রতি বছর একই দিনে অর্পি তিনটি কবর জিয়ারত করে যে কবরে প্রতিটি বাসিন্দা তার এক একটা আত্মা। অর্পি বেঁচে আছে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,, এটাই হচ্ছে জীবন ও বাস্তবতা।

মাশরাফি বিন মুর্তজার জীবনের গল্প



বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক অন্যতম তারকার নাম মাশরাফি বিন মুর্তজা। দেশের জন্য লড়তে গিয়ে যার পায়ে করা হয়েছে বার বার অস্রপ্রসার, তাওএকবার দুইবার নয় সাত সাতবার। যার যোগ্য নেতৃত্বের ফলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাড়িয়েছে। সেই মাশরাফি বিন মুর্তজার কিছু অজানা কথা আপনাদের জানাবো . বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা নড়াইলে ১৯৮৩ সালের ৫ অক্টোবর নানাবাড়ীতে মাশরাফির জন্ম। তার ডাক নাম ‘কৌশিক’বাবার নাম গোলাম মর্তুজা এবং মার নাম হামিদা বেগম,, ছোটবেলা থেকেই তিনি বাঁধাধরা পড়াশোনার পরিবর্তে খেলাধুলা নিয়ে পড়ে থাকতেন, আর মাঝে মধ্যে চিত্রা নদীতে সাঁতার কাটা।ছোটবেলা থেকে নানা বাড়িতে বড় হন মাশরাফি। সব সময় মামা-মামি তাকে আগলে রাখতেন। ম্যাশ যখন ঢাকায় আসেন, তখন তিনি উঠেছিলেন চাচা চাচীর বাসায়। এরপরই তো আজকের মাশরাফি হয়ে ওঠা। যে কারণে তাদেরকে কোনদিন ভুলতে পারবেন না তিনি। বাইকপ্রিয় মর্তুজাকে সবাই খুব হাসিখুশি আর উদারচেতা মানুষ হিসেবেই জানে। প্রায়ই তিনি বাইক নিয়ে স্থানীয় ব্রিজের এপার-ওপার চক্কর মেরে আসেন। নিজের শহরে তিনি প্রচণ্ড রকমের জনপ্রিয়। এখানে তাকে "প্রিন্স অব হার্টস" বলা হয়। বিবাহ; এ শহরেরই সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ার সময় সুমনা হক সুমির সাথে তার পরিচয় হয়। দু'জনে ২০০৬ সালে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তিনি দুই সন্তানের জনক, ছেলে সাহেল ও মেয়ে হুমায়রা ক্রিকেটে অভিষেক ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ২০০১ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজেই অভিষেক হয় তার, ৮ নভেম্বর টেস্ট অভিষেক ম্যাচে ১০৬ রানে ৪টি উইকেট নিয়েছিলেন এর পর ২৩ নভেম্বর ওয়ানডে অভিষেক ম্যাচে ৮ ওভার ২ বলে ২৬ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট এবং T20 অভিষেক ২৮ নভেম্বর ২০০৬ অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির রেকর্ড ম্যাচের সংখ্যা জয়পরাজয় ড্র টেস্ট ১ ১ ০ ০ ওডিআই 37 ২৩ ১৪ –0 টি২০আই ২৬ ৯ ১৬–0 মাশরাফির সপ্ন বাংলাদেশের রঙিন পোশাকের অধিনায়কের এখন একটাইস্বপ্ন ছেলে-মেয়েকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন। এছাড়া দেশের হয়ে যতদিন সম্ভব খেলে যেতে চান তিনি। আরো অনেক সাফল্য এনে দিতে চান লাল-সবুজ জার্সিধারীদের।

যে গল্পের নাম ছিল না


২০০৮ সাল… ঢাকায় আসি ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য । পরীক্ষা দেইএকটা Public uni তে… সেখানে পরিচয় হয় এক বড় ভাইএর সাথে…উনি আমাকে একটা ভর্তির জন্য গাইড বই দেয়…আর একটা কার্ড এর পিছনে তার সেল নাম্বার লিখে দেয়…প্রয়োজনে ফোন করার জন্য…পরীক্ষা দেই কিন্তু চান্স হয় না সেটা জানিও ওই ভাইয়ার মাধ্যমে…এর পর আর কথা হয় নি অনেক দিন… একদিন হোস্টেলে পাশের রুমে বসে আড্ডা শেষে রুমে এসে দেখি আমার ফোনে ওই ভাইয়ার মিসড কল…কল ব্যাক করি…উনি ফোন ধরে বলে যে ভুলে কল চলে গেছে….তবুও আমাদের কথা হয়…এই আমাদের বন্ধুত্ব শুরু….বেশ কয়েক দিন আমাদের টানা কথা হয়…তারপর একদিন দেখা করব বলে ঠিক করি….এতো দিনে আমাদের বন্ধুত্ব “ভাইয়া” থেকে “নাম” আর “আপনি” থেকে “তুমি”তে নামে… অনেক দিন পরের ঘটনা বলে এতো বেশি তার চেহারা আমার মনে ছিলো না….তাই দেখেই মনে মনে বললাম “ইস্ এতো কালো একটা ছেলের সাথে এতোদিন কথা বলছি???” তবুও কথা বললাম… কিন্তু তার সম্পর্কে পুরো ধারনাই বদলে গেলো আমার….এতো ভালো একটা ছেলে….প্রথম দেখায় কোন শালীনতার অভাব ছিল না….এভাবেই কেটে যায় ৩০ মিনিটের মতো…. এবার থেকে শুরু হলো রাতে দিনে কথা বলা….একজন বন্ধু এতো ভালো হয় কি করে তখন আসলেই বুঝতাম না….হিসেব কম মিলানোর চেস্টা করিনি….তবুও পারিনি… যাই হোক আমরা এরপর প্রতিদিন হাটতাম ফার্মগেটের জাহানারা গার্ডেনের রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা….দেড় টা মাসের এমন কোন দিন ছিলো না যেদিন আমরা হাটিনি একসাথে…. কোন একদিন আমাদের দেখে ফেলেছিলো আমার এক বড় ভাই…গুব্লেট টা সেই বাধায়….বাড়ি বলে দেয়…আমারতো তখন অবস্থা “ঈশ্বর আমাকে উঠাইয়া নাও,নয়তো দড়ি ফেলাও…একা একা উঠে যাই…”..খুব কষ্টে বাড়ি বুঝিয়েছিলাম যে সে শুধু আমার বন্ধু… একদিন হাটতে হাটতে তার পাগলামির মাত্রা এতো টা উপরে উঠে গিয়েছিলো যে আমি তাকে বলতে বাধ্য হলাম.. “এই তুমিকি আমাকে ভালোবাসো???”…..সে আমার দিকে পেছন ফিরে উল্টা ঘুরে আমাকে বলল“হুমম বাসি..” আবার সাথে সাথে আমার দিকে ফিরে বলল না না মজা করছিলাম….কিন্তু এতো দিনে আমি তার চোখের ভাষা পড়তে শিখে গেছি যে….বুঝলাম আজ কিছু বুঝি হয়ে গেলো আমার….. আমি যেনো আরো Dependable হয়ে গেলাম তার প্রতি…সেই কালো ছেলেটার প্রতি…কবে তাকে ভালোবেসেছিলাম জানি না….তবে এটা জানি আজ আমাদের ভালোবাসার ২ বছর ৭ মাস চলছে….আজ আমরা আছি কিছু সুখ, কিছুদুঃখ, স্বপ্ন দেখা আর কিছু আবদার মেটানোর মধ্যে….আর অমার বাড়িতে যেখানে ওকে দেখা হতো আমার শত্রু হিসেবে….সেই বাড়ির লোকজন ই জানে আমার একটাই মাত্র বন্ধু এই পৃথীবিতে….. কতো কথা বলে ফেললাম একটা কথা বলি এখন আমরা কেউ ই জানি না আমাদের এই ভালোবাসার শেষ কোথায়…..আমাদের ধর্ম টাই যে আলাদা……..!!! তারপরও কেনো যেনো তাকেই ভালোবাসি……..শুধুই তাকে……

জীবনের গল্প (হত্যাকারী)

ভালোবাসার অনুভূতি কখনো বলে কয়ে আসেনা। কে কখন কার ভালোবাসার রংে নিজেকে রাংাবে সেটা সে নিজেও জানেনা। তখন ক্লাস নাইনে পড়তাম। একদিন স্কুলে গিয়ে শুনলাম সোহা নামে আমাদের সাথে যে মেয়েটি পড়তো সে নাকি উৎপল রায় নামের এক হিন্দু ছেলের হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। কথাটা শুনে অবাক হয়েছিলাম। কারণ, এতোদিন দেখেছি হিন্দু মেয়েরা মুসলমান ছেলেদের সংে বাড়ি ছাড়ে কিন্তু সেবারই প্রথম দেখলামমুসলমান মেয়েরাও হিন্দু ছেলেদের ভালোবাসা পেতে পরিবারের অন্য সদস্যদের অভিশাপ কুড়ায়। তাছাড়া রক্ষণশীল মুসলমান পরিবারের মেয়ে ছিল সোহা। পরিবারের কড়া শাসন আর নিয়মনীতি মেনে চলতে হতো তাকে। ক্লাস সিক্স থেকেই দেখেছিলাম বোরখা পড়ে আসতে। কোনোদিন ওর মুখ দেখতে পাইনি আমরা। ওর মুখ দেখার ব্যাপারে ছেলেদের মধ্যে চাপা কৌতূহল ছিল। তারপরেও রক্ষণশীল পরিবারের পরদাকে ভেদ করে ভালোবাসা চুপিচুপি প্রবেশ করেছিল সোহার হৃদয়ে। আর হিন্দু ছেলের সাথে মেয়ের সম্পর্ক সোহার বাবা-মা মেনে নেয়নি। তাই পুরনো সব বন্ধন ছিন্ন করে সোহা জুড়ে নেয় নতুন সংযোগ। স্কুল থেকে বন্ধুরা যাচ্ছিল সোহা-উৎপলের সংসার দেখতে। তাদের সাথে আমিও গেলাম। প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে পৌছালাম উৎপল রায়ের বাড়িতে। বেশ বড় পাকা বাড়ি। আসবাবপত্রেরও অভাব ছিল না। বাড়িতে সোহা আর উৎপল ছাড়া কেউ ছিল না। উৎপলের বাবা-মা গত হয়েছেন কয়েক বছর আগেই। বোরখা পরে স্কুলে যেত বলে কোনোদিন সোহার মুখ দেখতে পেতাম না। সেইদিন দেখলাম।দেখে চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। দেখতে একদম সাক্ষাৎ পরীদের রাণী। এমন একটা মুখ পেলে বাবা-মার শাসন উপেক্ষা করে, রাজপ্রাসাদ ছেড়ে যেকোনো রাজপুত্রও অনায়াসে তাকে বিয়ে করতো। আমরা কিছুক্ষণ সেখানে থেকে সোহা-উৎপলের সুন্দর জীবন কামনা করে যার যার বাড়ি ফিরে গেলাম।ক্লাস নাইন পেরিয়ে কখন যে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে উঠলাম কিছুই বুঝতেপারলাম না। ডিসেম্বরের শেষের দিক। শীতকালীন ছুটি কাটাতে বাড়ি গেলাম। একদিন সন্ধ্যে বেলা এক বন্ধুকে নিয়ে হাটছিলাম। বন্ধুই আমাকে জানালো পাশের গ্রামের একটি লোকের কথা। যে নাকি জুয়া খেলে সবকিছু হারিয়ে সর্বশেষ বাজি ধরেছে নিজের বৌকে। সন্ধ্যার পর লোকটারবাড়িতে বসবে জুয়ার আসর। ব্যাপারটা খুব গোপনীয়, আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং মনে হলো। তাই বন্ধুকে নিয়ে কৌতূহল মেটাতে ছুটলাম সেইজুয়াড়ির বাড়িতে। আমাদের যেতে দেরী হয়েছিল। খেলা প্রায় শেষের দিকে।দর্শক আমাদের সহ পাঁচজন। অর্থাৎ, খেলাটা গোপনেই হচ্ছিল। বৌ বাজি ধরা লোকটা আর ঐ বাড়িটাকে আমার খুব চেনা চেনা লাগছিল। যথাসময়ে খেলাশেষ হলো। বাজিধরা লোকটা হেরে গেল। বিজয়ীরা পুরষ্কার চাইলো। লোকটা তার বৌকে আনতে বাড়ির ভেতরে গেল। বেশ কিছু সময় পার হয়ে গেল। লোকটা আসছিল না দেখে আমি আর আমার বন্ধু বাদে সবাই বাড়ির ভেতরে ঢুকলো। হঠাৎ তারা চিৎকার দিয়ে যে যার মতো ছুটে পালালো। কৌতূহলী হয়ে ভেতরেঢুকলাম এবং যা দেখলাম তাতে দুজনই বিস্মিত হলাম। বৌ বাজিধরা লোকটারশরীর ও মাথা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মেঝেতে পড়ে ছিল। আর পাশেই দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে পা ছড়িয়ে বসে একটি মেয়ে কাঁদছিল। ডান হাতের কাছে একটি রক্তমাখা ধারালো দা ফেলা। মেয়েটিকে চিনতে অসুবিধা হলোনা। মেয়েটা ছিল উৎপল রায়ের হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে পালানো আমার সেই বান্ধবী সোহা। উৎপলকে আগে চিনতে পারিনি। কারণ, ওর মুখ দাড়ি, গোফে ভরা ছিল। তাছাড়া, নেশা করে ওর চেহারা নষ্ট হয়ে গেছে। পুরো বিষয়টা আমার কাছেপরিস্কার হলো। তবে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম। একটু পরেই পুলিশ এলো। বুঝতে পারলাম পালিয়ে যাওয়া লোকগুলো পুলিশে খবর দিয়েছে।একটা পুলিশ আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, কে খুন করেছে? সংে সংে সোহা ক্ষিপ্রগতিতে বললো, "ওকে কি জিজ্ঞেস করছেন? আমি খুনি, খুন আমি করেছি, আমাকে ধরে নিয়ে যান। অনেক ভালোবেসেছিলাম ওকে। যার কোনো মূল্য দেয়া তো দূরে থাক, পায়ের নিচে পিষে খুন করেছে।আজ তার শোধ নিলাম।" সোহাকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে গেল পুলিশ। কেবল তাকিয়ে দেখলাম।কারণ, এটাতো স্বাভাবিক বিষয়। খুন করলে তো জেলে যেতেই হবে। তাছাড়া,জানতাম এদেশে ভালোবাসা হত্যা করলে কোনো দোষ হয়না কিন্তু ভালোবাসারহত্যাকারীকে হত্যা করলে হাতকড়া পরানোর লোকের অভাব হয় না।"Someone, Somewhere is waiting for you" But, you have to find out the right person and stay a long away from cheater.
অাপনাদের সাথে ঘটে যাওয়া যেকোনো গল্প অামাদেী মাধ্যমো শেয়াী করতে অামাদের ফেসবুক পেজ এ মেসেজ দিন।


জীবনের গল্প (অনিল ছোয়া)

চারিদিক নিস্তব্ধ। পশ্চিম আকাশে সূর্য হেলে গেছে। গৌধুলির লাল আভার বিকিরণ হচ্ছে নদীর ঢেউ এ। . আর অনিলের চোখের অশ্রুফোটা নদীতেপড়ছে ব্রীজের উপর থেকে।তাতে ক্ষুদ্র তরঙ্গের সৃষ্টি হচ্ছে নদীর ঢেউ এর সাথে।কিন্তু সেই ক্ষুদ্র ঢেউ নদীর ঢেউয়ের কাছে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ঠিক এভাই ছোয়ার জীবন থেকে বিলীন হয়ে গেছে অনিল।কত স্বপ্ন সাজিয়ে রেখেছিল অনিল ছোয়াকে ভালো রাখার জন্য।কত আশার প্রদীপ জ্বলেছিল।কিন্তু সবকিছু থেকে এখন কেবলই ধোয়া উঠছে। . কারন হলো এখনো কোনচাকরি হলো না অনিলের ।অনিল চাকরির জন্য হন্নে হয়ে বেড়িয়েছে এই দুইটা বছর কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাকরি হলো না।আজকেও একটা কোম্পানি থেকে ফোন করার কথা কিন্তু করে নি।করলে হয়তো ছোয়ার বিয়েটা আটকানো যেতো কিন্তু শেষ চেষ্টাটাও করতে পারলো না অনিল। নিজেকে খুব ব্যর্থমনে হচ্ছে।জিবনটাকে অর্থহীন লাগছে, চরম হতাশায় ডুবে গেছে অনিল।ভালোবাসাটা কি চাকরির সমানুপাতিক আর অর্থের ব্যস্তানুপাতিক। সেখানে ছলনা শব্দটা ধ্রুবক হলে সমানের ওপাশে ছোয়ার নামটা সহজেই বসানো যাবে।কত সহজে চলে গেল ছোয়া। এসব ভাবতে ভাবতে ফুটপাতের ধারে হেটে চলছে অনিল।কিছুটা আনমনে হয়ে পা চালাচ্ছে।এমন সময় মাথার উপর বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনা ঘটেছে সেদিকে খেয়াল নেই অনিলের । এমন সময় ধাক্কা দিয়ে কেউ সরিয়ে দেয় অনিলকে।তাকাতেই দেখে একটা মেয়ে। নাম মিম সেখান থেকেই মিমের সাথে পরিচয় হয় অনিলের। . অনিলকে চাকরি পাওয়ায় সহায়তা মিম।আস্তে আস্তে সম্পর্কের স্পর্শ টের পাায় দুজন। ,৫ বছর পর, আজ অনিল আর মিম এর ৩য় বিবাহ বার্ষিকী। অনিল দূর থেকে তার স্ত্রীকে লক্ষ্য করছে কত সুন্দর লাগছে তার বউটাকে। কত নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে ফেলেছে মিম তাকে। , আজ ছোয়ার কথা মনে পড়েকিছুটা বাকা হাসি আসে অনিলের ঠোটের কোণে।আর মনে মনে ধন্যবাদ দেয় ছোয়াকে।ছোয়া চলে না গেলে হয়ত এমন দিন অনিলের জিবনে আসতো কি না সেটা কল্পনাতীত।



গল্পটি লিখেছেনঃ
হাফিজ অাব্দুর রহমান

অাপনাদের জীবনের গল্প শেয়ার করতে অামাদের ফেসবুক পেজ এ মেসেজ করুন।




banglablog2020.blogspot.com

****অহংকারী মোরগ ***

এক ছিল চাষি।চাষির ছিল একটি খামার।খামারে অনেক রকম মুরগি ছিল।তার মধ্যে একটা লাল রঙ্গের মোরগ ছিল।আর বাকি সব মুরগির রং ছিল সাদা।লাল রঙ্গের মোরগ টাকে চাষি খুবই ভালোবাসত।এজন্য তার ছিল অনেকঅহংকার।বাকি সব মুরগি তার সাথে ঘুরতে চাইলে,লাল মোরগ বলত আমি তোমাদের সাথে খেলব না।কারণ তোমাদের দেখতে ভালো না।এভাবে অন্য মুরগির সাথে লাল মোরগ কথা বলত।কিন্তু একদিন সে খামারে একটা চোর ডুকে পড়ে।মুরগি চুরি করার জন্য।কিন্তু চোর ভাবতে পারছে না যে সে কোন মুরগিটাকে নেবে।অবশেষে সে লাল মোরগ টাকে দেখতে পেল।তার পর সে লাল মোরগ টাকে নিয়ে চলে গেল।পরে অন্য সব মুরগি বলে উঠল যে আমাদের কে আজ আমাদের পালক গুলো বাঁচাল।এ থেকে আমরা শিখলাম যে অহংকার করা ভালো নয়।অহংকার পতনের মুল।

শেয়াল ও বাঘের এক মজার কাহিনী

ঠোট্ট একটা শহর। সেখানে সবচাইতে বড় ডাক্তার হইয়া পড়িল এক নাপিত। ছোটখাট অসুখে এটা ও্টা ঔষধ দিয়াই নয়, ফোঁড়া কাটা হইতে আরম্ভ করিয়ারোগীর পেট চিরিয়া রোগীর পেট চিরিয়া পেট হইতে পুঁজ বাহির করিয়া দেওয়া পর্যন্ত বড় বড় কাটাছেঁড়ার কাজও সে অতি সহজেই করিয়া দেয়। এসবকাজ করিতে ডাক্তারেরা কত রকমের যন্ত্র লয়। ছুরি, কাঁচি ভালোমত গরমপানিতে সিদ্ধ করিয়া, পানিতে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করিয়া কত সাবধান হইয়া তাহারা রোগীর গায়ে অস্ত্র ধরে। নাপিত কিন্তু সবের ধারধারে না। সে হাতের তোলায় তাহার ক্ষুর আর নরুণ ভালোমত ঘষিয়া খসাখস বড় বড় কাটাছেঁড়ার কাজ করিয়া যায়। এমন পাকা তাহার হাত: রোগীর পেট চিরিয়া, পেটের মধ্যে হাত দিয়া, সেখানে নাড়ির ভিতরে ফোঁড়াটি হইয়াছে, অতি সহজেই সেখানে ক্ষুর চালাইয়া পুঁজরক্ত বাহির করিয়া আনে। তারপর সাধারন সুঁই সুতা দিয়া ক্ষতস্থান সেলাই করিয়া, আর এবটুহলুদ গুঁড়া মাখাইয়া দেয়। ক্ষতস্থান সারিয়া যায়। চোখের পলক ফেলিতে না ফেলিতে সে বড় বড় কাটাছেঁড়ার কাজ করিয়া ফেলে। কাহারও ফোঁড়া হইয়াছে, বেদনায় চিৎকার করিতেছে। দেখি, দেখি বলিয়া নাপিত সেখানে তার ক্ষুর চালাইয়া দিয়া পুঁজরক্ত বাহির করিয়া আনে। রোগী আরাম পাইয়া আনন্দের হাসি হাসে। গলায় মাছের কাঁটা ফুটিয়াছে, দুষ্ট ছেলে খেলিতে খেলিতে মারবেল-গুলি কানের মধ্যে ঢুকাইয়া দিয়াছে, আর খুলিতেপারে না। নাপিত নরুনের আগা দিয়া গলার ভিতর হইতে মাছের কাঁটা বাহিরকরিয়া আনে, কানের ভিতরে নরুনের আগা ঢুকাইয়া দিয়া মারবেল বাহির করিয়া আনে। শুধু কি তাই? পিঠে ফোঁড়া হইলে তাকে বলে কারবঙ্কল। বড় বড় ডাক্তার সেটা কাটিতে হিমশিম খাইয়া যায়। চোখের পলক ফেলিতে ফেলিতে নাপিত সেখানে ক্ষুর চালাইয়া দেয়। এসব কাটাকুটিতে সব রোগীই কি ভাল হয়? কোনটা ভাল হয়– কোনটা পাকিয়া বিষ লাগিয়া ফুলিয়া মরে।তা এরূপ ত ডাক্তারের বেলায়ও হয়। তাদের হাতেই কি সব রোগী ভাল হয়? শহরের সব লোক তাই অসুখে বিসুখে নাপিতকেই ডাকে। ডাক্তার ডাকিলে এত টাকা দাও–অত টাকা দাও, তারপর ঔষধের দাম দাও। কত রকমের ঝামেলা। নাপিতের কাছে ভিজিটের কোন দাম-দস্তুর নাই। দুই আনা, চার আনা যার যাহা খুশি দাও। ঔষধ ত তার মুখে মুখে–গরম পানির সেক, হলুদের গুড়োর প্রলেপ, পেটে অসুখ করলে আদা নুন খাও, তাতে না সারিলে জইনের গুঁড়া চিবাও, জ্বর হইলে তুলসীর পাতা, নিউমোনিয়া হইলে আকনের পাতার সেক। এসব ঔষধ বনে জঙ্গলে, পথে ঘাটে যেখানে-সেখানে মেরে। তাই সকলেইনাপিতকে দিয়ে চিকিৎসা করায়। শহরের আর আর সব পাশ করা ডাক্তারেরা রোগীর অভাবে ভাতে মরে। নাপিতের মেয়েছেলে দুধে ভাতে খাইয়া নাদুসনুদুস। একদিন সব ডাক্তার একত্রিত হইয়া ভাবিতে বসিল, কি করিয়াতাদের পসার ফিরাইয়া আনা যায়। এক ডাক্তার বলে, “দখে ভাই। আগে আমার বাড়িতে রোজ সকালে শত শত রোগী আসিয়া গড়াগড়ি দিত। টাকা-পয়সা তো দিতই, সেই সঙ্গে রোগ সারিলে কলাটা মূলটা, যে দিনের যে, তাও দিয়া যাইত। এই যে আমের মওসুম। আমার ছেলেমেয়েরা একটা আমও মুখে দিযে দেখিল না! আর নাপিতের বাড়ি দেখ গিয়ে… আর এক ডাক্তার বলে,“আরে ভাই! ছাড়িয়া দাও তোমার আম খাওয়া। রোগীপত্তর আসে না। টাকা-পয়সার অভাবে এবার ভাবিয়াছি, ঔষধ মাপার পালা-পাথর, আর বুক দেখার টেথিস্কোপটা বেচিয়া ফেলিব।” অপর ডাক্তার উঠিয়া বলে, “তুমি ত এখনওবেচ নাই। এই দুর্দিনের বাজারে চাউলের যা দাম! ডাক্তারি যন্ত্রপাতিত কবেই বেচিয়া খাইয়াছি। এবার মাথার উপরে টিনের চালা কয়খানা আছে। তাও বেচিবার লোক খুঁজিতেছি।” ওপাশের ডাক্তার বলে, “ভায়া, হে, এসবদুঃখের কথা আর বলিয়া কি হইবে, দেখিতেছ না? আমাদের সকলের অবস্থাই ওই একই রকম। এখন কি করা যায় তাই ভাবিয়া বাহির কর।” অার এক ডাক্তার বলে, “দেখ ভাই! বিপদে পড়লে বুড়ো লোকের পরামর্শ লইতে হয়। শহরের মধ্যে যে বুড়ো ডাক্তার আছেন, বয়স হইয়াছে বলিয়া এখন রোগী দেখেন না। তিনি আমাদের সকলের ওস্তাদ। চল যাই, তাঁহার নিকটে যাইয়া একটা বুদ্ধি চাই; কি করিয়া আমাদের পূর্বের পসার বজায় রাখিতে পারি।” তখন সকলে মিলিয়া সেই বুড়ো ডাক্তারের কাছে যাইয়া উপস্থিত হইল। বুড়ো ডাক্তার আগাগোড়া সমস্ত শুনিয়া বলিলেন, “তোমরা কেহ সেই নাপিতকে আমার নিকট ডাকিয়া আন।” নাপিত আসিলে বুড়ো ডাক্তার তাহাকে বলিলেন, “দেখ এইসব ছোকরা ডাক্তারের কাছে শুনিতে পাইলাম, তোমার কাটাছেঁড়ার হাত পাকা। তুমি একটা কাজ কর। আমাদের নিকট হইতে শারীরবিদ্যাটা শিখিয়া লও। তাতে করিয়া তোমার ডাক্তারি বিদ্যাটা আরওপাকিবে।” নাপিত বলিল, “এ অতি উত্তম কথা। আমি ত মুখ্যুসুখ্যু মানুষ। আপনারা যদি কিছু শিখাইয়া দেন বড়ই উপকার হইবে।” তখন সকল ডাক্তার মিলিয়া নাপিতকে শারীরবিদ্যা মিখাইতে লাগিল। শরীরের এখান দিয়া এই নাড়ি প্রবাহিত হয়। এইটা শিরা, এইটা উপশিরা। এইখানে ধমনী। এইখানে লিভার। হাতের এইখানে এই শিরা। কাটিলে রক্ত বন্ধ হইবে না, লোক মরিয়া যাইবে। এইখানে হৃৎপিন্ড। এইভাবে সত আট দিন ধরিয়া সব ডাক্তার মিলিয়া নাপিতকে শারীরবিদ্যা শিখাইতে লাগিল।নাপিত বুদ্ধিমান লোক। ডাক্তাদের যাহা শিখিতে মাসের পর মাস লাগিয়াছিল, সেতাহা সাত দিনে শিখিয়া ফেলিল। শুধু কি শারীরবিদ্যা? ডাক্তারেরা তাহাকে নানারকম অসুখের জীবাণুর কথাও বলিয়া দিল। ডাক্তারি যন্ত্রপাতি ভালোভঅবে পরিষ্কার করিয়া না লইলে রোগীর কি কি রোগ হইতেপারে তাহাও বুঝাইয়া দিল। তারপর সেই বুড়ো ডাক্তারের পরামর্শমতো সকলডাক্তার একটি রোগী আনিয়া নাপিতের সামনে খাড়া করিল। তাহার সামান্য ফোঁড়া হইয়াছিল। তাহারা তাকে সেই ফোঁড়া কাটিতে বলিল। নাপিত কতরকম করিয়া হাতধোয়। কত ঔষধ গোলাইয়া তার ক্ষুর-নরুন পরিষ্কার করে, কিন্তু তার মনের খুঁতখূঁতি যায় না। হয়তো তার হাত ভালোভাবে পরিষ্কার হয় নাই। হয়তো অস্ত্রে কোন রোগের জীবাণু লাগিয়া আছে। আবারনতুন করিয়া অস্ত্র সাফ করিয়া নাপিত সেই লোকটির ফোঁড়া কাটিতে আরম্ভকরিল, কিন্তু তার হাত যে আজ কাঁপিয়া ওঠে। শরীরের এইখানে এই শিরা এইখানে উপশিরা। ওইখান দিয়ে ক্ষুর চালাইলে রোগী মারা যাইবে; নাপিত ক্ষুর এভাবে ধরে, ওভাবে ধরে, কিন্তু ফোঁড়া কাটিতে কিছুতেই সাহস পায় না। এতদিন অজানাতে রোগীর গায়ের যেখানে সেখানে ক্ষুর চালাইয়াছে। কিন্তু সমস্ত জানিয়া শুনিয়া সে আজ রোগীর গায়ে ক্ষুর চালাইতে সাহস পায় না। ভয়ে তাহার হাত হইতে অস্ত্র খসিয়া পড়িয়া গেল।নাপিত আর তাহার ক্ষুর চালাইতে পারিল না। সেই হইতে নাপিতের পসার বন্ধ হইল। লোকেরা আবার ডাক্তার ডাকিতে আরম্ভ করিল।